স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১
স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ প্রতিষ্ঠা ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশ রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। এ রোডম্যাপের চারটি পিলার-
১। স্মার্ট সিটিজেন
২। স্মার্ট সোসাইটি
৩। স্মার্ট ইকোনমি ও
৪। স্মার্ট গভর্ন্যান্স
স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবানে সরকারের ১৪ সিদ্ধান্ত
সরকারের পরবর্তী ভিশন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’ বাস্তবানে ১৪টি কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।এসব সিদ্ধান্ত এসেছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’-এর তৃতীয় সভা হতে যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশের পর ভবিষ্যত বাংলাদেশের রূপরেখা দেন প্রধানমন্ত্রী।ইতোমধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবানে ১৪টি সিদ্ধান্তসহ সভার কার্যপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ওই সভায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ উপস্থাপন করেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। যেখানে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২১ রূপকল্পের আওতায় যেমন ডিজিটাল শিক্ষা, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, ডিজিটাল কৃষি ইত্যাদির বাস্তাবায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে তেমনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’ এর আওতায় প্রধান অঙ্গ হবে স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি , স্মার্ট বাণিজ্য, স্মার্ট পরিবহন ইত্যাদি।
স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বাস্তবানে নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হ :
১।বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠায় স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ ভিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠিত হবে। এটি বাস্তবান করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।
২। অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গড়ে তোলা এবং পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্ননের মূল ধারা নিয়ে আসতে ডিজিটাল ইনক্লুশন ফর ভারনারেবল এক্সেপশন (ডাইভ) উদ্যোগের আওতা আত্মকর্মসংস্থানভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ। বাস্তবানের দায়িত্ব তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের।
৩। শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রম নিশ্চিতে ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম’ এর আওতা শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ সহাতা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। যা বাস্তবান করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণাল এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ।
৪। স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তুলতে ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি স্থাপন। বাস্তবান করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ।
৫। ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট, মাঝারি ব্যবসাগুলোর জিডিপিতে অবদান বাড়াতে এন্টারপ্রাইজভিত্তিক ব্যবসাগুলোকে বিনিয়োগ উপযোগী স্টার্টআপ হিসেবে প্রস্তুত করা। এই উদ্যোগ বাস্তবানে রয়েছে শিল্প মন্ত্রণাল, বাণিজ্য মন্ত্রণাল ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।
৬। অল্টারনেটিভ স্কুল ফর স্টার্টআপ এডুকেটরস অব টুমোরো (এসেট) প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এটি বাস্তবান করবে।
৭। বাংলাদেশ নলেজ ডেভেলপমেন্ট পার্ক নির্মাণ ও পরিচালনা। এটি বাস্তবানে থাকছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
৮। সেন্টার ফর লার্নিং ইনোভেশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব নলেজ (ক্লিক) স্থাপন। বাস্তবানে থাকছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।
৯। এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) প্রতিষ্ঠা। বাস্তবানে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।
১০। সেলফ অ্যামপ্লমেন্ট অ্যান্ড এন্টরপ্রেইনরশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিড) প্লাটফর্ম স্থাপন। এটি বাস্তবান করবে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
১১। কন্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লিংকেজ ল্যাব (সেল) স্থাপন। তথ্যপ্রযুক্তি অধিদপ্তর এটি বাস্তবান করবে।
১২। সার্ভিস এগ্রিগেটর ট্রেইনিং (স্যাট) মডেলে সরকারি সেবা ও অবকাঠামো নির্ভর উদ্যোক্তা তৈরি করা। বাস্তবানে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ।
১৩। সকল ডিজিটাল সেবাকে কেন্দ্রিভাবে সমন্বিত ক্লাউডে নিয়ে আসা। এটি বাস্তবানে থাকবে সব মন্ত্রণাল ও বিভাগ।
১৪। ডেটা নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল সার্ভিস আইন, শেখ হাসিনা ইন্সটিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (শিফট) আইন, ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিওরশিপ অ্যাকাডেমি (আইডিয়া ) আইন, এজেন্সি ফর নলেজ অন অ্যারোনটিক্যাল অ্যান্ড স্পেস হরাইজন (আকাশ) আইন, ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি আইন ও জাতী স্টার্টআপ পলিসি প্রণন। এ বিষগুলো বাস্তবান করবে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষক বিভাগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২২-এর সফল বাস্তবানের ধারাবাহিকতা সরকার এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অত্যাধুনিক পাওয়ার গ্রিড, গ্রিন ইকোনমি, দক্ষতা উন্নন, ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে স্বীকৃতি প্রদান এবং নগর উন্ননে কাজ করছে।
শহরে বসবাসরত মানুষের জন্য স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে আমাদের অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে কাজ করতে হবে। আইসিটি বিভাগ জনবান্ধব সেবা প্রদানে ইতোমধ্যে অনেকগুলো বিষ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। স্থানী সরকার ও আইসিটি বিভাগ সাধারণ মানুষের আশা পূরণে সামনের দিনে সম্মিলিতভাবে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে পারে। স্মার্ট সিটি বাস্তবানে নির্ধারিত এলাকার বসবাসরত জনসংখ্যাকে বিবেচনা নিয়ে ওই এলাকার জন্য মাস্টারপ্লান তৈরি করতে হবে।
হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও হিউম্যানওয়ারকে একসাথে কাজে লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে হিউম্যানওয়ার তথা মানুষকেই আসল ভূমিকা পালন করতে হবে অন্যথা সব প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও তার যথাপোযুক্ত ব্যবহার সম্ভব হবে না। আর একজন সত্যিকারের মানুষ তৈরির জন্য তাদেরকে কেবল প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুললেই হবে না তাদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবেও তৈরি করতে হবে।
ডিজিটাল কানেক্টিভিটির উপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি হবে পরবর্তী উন্ননের মহাসড়ক। এই মহাসড়ক ছাড়া স্মার্ট সিটি বা স্মার্ট টেকনোলজি কোনোটাই বাস্তবান করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক এগিয়ে রয়েছে। ২০২১ সালেই পরীক্ষামূলকভাবে দেশে ফাইভজি (5G) সেবা চালু করা হয়েছে এবং এরইমধ্যে ফাইভজি (5G) কানেক্টিভিটি সেবা নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বিনির্মাণে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্ননে আমাদেরকে ফাইভজি কানেক্টিভিটির সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে।
স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে স্মার্ট সিটির কনসেপ্ট বাস্তবানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এরইমধ্যে কাজ করা শুরু করেছে। এলক্ষ্যে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে করা ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৭৬৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ডিএনসিসিতে ৪৮ হাজার স্মার্ট লাইট স্থাপন করা হয়েছে যা মোবাইল ফোন থেকেই নিন্ত্রণ করা যা। এসব লাইটের আলো প্রয়োজন অনুযায়ী নিন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ সাশ্র করা হচ্ছে। অনলাইনে ট্যাক্স আদা শুরু করা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে ১ লক্ষ ২৮ হাজার বাসা-বাড়িকে সার্ভের আওতা নিয়ে আসা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স এবং আইওটি এর মাধ্যমে ২,৩৫০টি স্থানে ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নাগরিক সেবার সকল কার্যক্রমকে পর্যাক্রমে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। এখন ৩৩৩ এর মাধ্যমে নাগরিকরা কোনো অভিযোগ করলে সাথে সাথে এর সামাধান করা সম্ভব হচ্ছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করার জন্য বুয়েট-এ এরই মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং স্থাপন করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের উন্ননের জন্য এগ্রিকালচার, পাওয়ার এবং অন্যান্য সেক্টরের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করা হচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট এগ্রিকালচার তৈরিতে বুয়েট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যাল একসাথে কাজ করছে। স্মার্ট ভিলেজের অন্যতম উপাদান স্মার্ট এগ্রিকালচার। স্মার্ট এগ্রিকালচার-এর জন্য আইওটি ডিভাইস ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্মার্ট এগ্রিকালচারের জন্য ন্যানো টেকনোলজি এবং এআই ব্যবহার করে পরিকল্পনামাফিক কতটুকু সার ও ওষুধ দেওয়া লাগবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব। প্রযুক্তি ব্যবহারে আগামী দুই বছরে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব হবে। উচ্চফলনশীল ধান চাষাবাদের মাধ্যমে আগামীতে ধানের উৎপাদন বহুগুণে বাড়াবে। ধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে এবং আমদানি না করতে হলে আমাদেরকে কোনো দুঃচিন্তা করতে হবে না।
২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালা থেকে পাওয়া সংশ্লিষ্টদের সুচিন্তিত মতামত, উপদেশ ও সুপারিশ ভবিষ্যতে আমাদের পথ দেখাবে। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবানের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি এই চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।
উল্লেখ্য, স্মার্ট সিটি বলতে এমন এক নগরানকে বুঝা যেখানে ন্যূনতম পরিবেশগত প্রভাব নিশ্চিত করে কোনো একটি শহরের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য উন্নততর জনবান্ধব সেবা প্রদানে আধুনিক প্রযুক্তিগুলোকে কাজে লাগানো হবে। স্মার্ট সিটিতে অনেকগুলো উপাদান থাকলেও বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটি কাঠামোতে স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, জননিরাপত্তা, ইউটিলিটি এবং নগর প্রশাসনসহ মোট ৫টি উপাদান এবং পরিষেবাকে মোটাদাগে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, স্মার্ট ভিলেজ বলতে এমন এক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বুঝা যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং উন্মুক্ত উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারের মাধ্যমে স্থানী নাগরিকরা বিশ্ব বাজারে সাথে যোগাযোগের সুযোগ পাবে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভ খাতের বিভিন্ন সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে উন্নত করা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নন এবং নবানযোগ্য শক্তির উৎস বিকাশে স্মার্ট ভিলেজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস